পাখির কিচিরমিচিরে মুখর থাকে এই সৌন্দর্যের রাজধানী


স্টাফ রিপোর্টার, মেহেরপুর বার্তা টোয়েন্টিফোর প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১২, ২০২১, ১০:৩৪ অপরাহ্ণ /
পাখির কিচিরমিচিরে মুখর থাকে এই সৌন্দর্যের রাজধানী

I”আকাশে তোমার ওড়া দেখে আমি স্বচ্ছন্দে বেড়াই ভেসে স্বপ্নপুরীতে দূর দেশে যেখানে প্রত্যহ মায়াবী পাখিরা দিব্য সরোবরে মনোরম জলক্রীড়া করে”-কবি মহাদেব সাহার কবিতার মতই পাখিরা এখানে জলকেলিতে ব্যস্ত থাকে, মুক্ত আকাশে ডানা মেলে নির্ভয়ে।হ্যাঁ আপনারা ঠিকই ধরেছেন,আমি বলছি রাজধানীর অদূরে অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা।কবি যদি শীতকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন তাহলে হয়ত তাঁর এই মনবাসনা কিছুটা হলেও পূর্ণতা পাবে।

বাংলাদেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতের শুরু থেকেই হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে আসতে শুরু করে অতিথি পাখিরা। কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকাল আর সন্ধ্যা নামার ঠিক পূর্ব মুহুর্তে অতিথি পাখির কিচিরমিচিরে মুখর থাকে এই সৌন্দর্যের রাজধানী।

মূলত,প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ দিকে পৃথিবীর উত্তরে অবস্থিত সাইবেরিয়া,মঙ্গোলিয়া,নেপাল,চীনের জিন-জিয়াং সহ বেশ কয়েকটি দেশে তীব্র শীত এবং প্রচন্ড খাদ্যাভাব দেখা দিলে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশের মত তুলনামূলক কম শীতপ্রধান দেশে এসে আশ্রয় নেয় এই সকল পাখিরা।পুরো শীতকাল এরা এসকল নাতিশীত উষ্ণ দেশে অতিবাহিত করে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে আবার নিজস্ব নীড়ে ফিরে যায়।

বাংলাদেশের যেসব স্থানে অতিথি পাখিরা আশ্রয় নেয় তার মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।এখানকার নিরিবিলি সবুজ প্রকৃতি,ছোট-বড় লেক,অধিক নিরাপত্তা সব মিলিয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে এই ক্যাম্পাসে অতিথি পাখির আগমন অনেক আগে থেকে।প্রতিবছর অতিথি পাখি আসার পূর্বেই লেক গুলো পরিষ্কার করা হয়।সেই সাথে দর্শনার্থীরাও বেশ সতর্কতার সাথে দূর থেকে পরিযায়ী পাখিদের জলকেলি উপভোগ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর লেক,বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশের লেক,সুইমিংপুল সংলগ্ন লেকে সব চেয়ে বেশি অতিথি পাখির উপস্থিতি থাকে

বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক গুলোতে ১৯৮৬ সালের পর থেকে নিয়মিত অতিথি পাখি আসে।সুরহেন,ডাহুক,খঞ্জনা,ছোট সরালি,বড় সরালি,জলপিপি,নর্দান পিনটেইলস,কমনচিল নীলশীর,বুটি হাঁস সহ প্রায় দেশি-বিদেশি মিলে ২০০ প্রজাতির পাখি এসে আশ্রয় নেয় এখানে।

এদিকে ২০১৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে সরকার।এরপর থেকে প্রায় প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয় অতিথি পাখি মেলা।শীতের কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে কিংবা ঝলমলে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে অতিথির পাখির কলকাকলিতে নিজেকে হারানোর সুযোগ পেলে খুব একটা খারাপ হয় না।আর এভাবে নিজেকে হারাতে চাইলে চলে আসতে পারেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

লেখক

মোঃ আব্দুর রউফ ইমন

শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।