নিজস্ব প্রতিবেদনঃ মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়ীয়া গ্রামের হাজী পাড়ার ইদ্রিস আলীর প্রবাসী ছেলে এরশাদ আলীর স্ত্রী ও মোল্লাপাড়ার মহাব্বত আলীর মেয়ে, জুবাইদা আরফিন বন্যা’র (২৮) তেঁতুলবাড়ীয়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে । গত বুধবার বিষপান করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় । বন্যা’র এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে তার পরিবার । অসহায় হয়ে পড়েছেন তার ১০ বছর বয়সি ছেলে ও ৩ বছর বয়সি ছোট মেয়েটি । এ করুণ মৃত্যু নিয়ে শোকাহত আঙুলের ফাঁকে বেদনার্ত অনুভূতির শোকগাঁথা ছড়িয়ে পড়েছে তার বাবা মা ছোট ভাই সহ নিকটস্থ আত্মীয়াদের মাঝে ।
ছটফট স্বভাব ও দুরন্তপনা মিষ্টভাষী বন্যা’র এই মৃত্যুর পেছনে কেবা কারা দায়ি সে ব্যপারে মেহেরপুর বার্তা টোয়েন্টিফোর বন্যা’র শশুরবাড়ির এলাকাবাসীর মতামত নিয়ে বিষয়টি জানার চেষ্টা করেছেন । তবে অনেকেই ধারনা করছেন বিষপানের দিন সকালে বন্যা’র শশুর অকথ্য ভাষায় বন্যকে গালাগালি করেছিলেন ধারনা করা হচ্ছে, হইত সহ্য করতে না পেরে সে কারনেই বিষপানের পথ সে বেছে নিয়েছিল ।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, বন্যা’র স্বামী এরশাদকে (৩২) বিদেশে পাঠানোর সময় কিছু টাকা কম থাকায় গ্রামের হাজীপাড়ার মৃত হারেজ শাহের ছেলে সুদি ব্যবসায়ী হাতেম আলীর কাছ থেকে সুদের উপরে ২৫০০০ টাকা নেন । পরে এরশাদ বিদেশ চলে গেলে বন্যার সাথে হাতেম একটা সখ্যতা গড়ে তুলে । বন্য দেখতে সুন্দর ও সুদর্শী থাকায় বন্যাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রেমের প্রস্তাবের মাধ্যমে অনৈতিক পরকিয়া সম্পর্ক গড়ে তোলে । মূলত এই নিয়েই সমস্যার সুত্রপাত ঘটে আর গত এক বছর ধরে বন্যার পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি হয় । মাঝে মাঝেই কাজি-ঝগড়া লেগেই থাকত বন্যার পরিবারে । লম্পট হাতেম সব জানার পরেও তার পথ থেকে সরে আসেনি । গত ৬ মাস আগে বন্যার সাথে সুদকারবারী হাতেমের অনৈতিক কার্জকালাপ নিয়ে ঐ গ্রামের এক প্রবাসী মেহেরপুর বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে অভিযোগ করেন। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকায় সে সময় প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা সম্ভব হয়ন নি ।
হাতেম এক নিকটস্থ প্রবাসী প্রতিবেশী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মথুরাপুর গ্রামের কয়েক জনের কাছে সুদে টাক দিয়ে একই কৌশলে হাতেমের গুদাম ঘরে ডেকে নিয়ে তার সাথে অনৈতিক কাজ করেন । ব্যপারটি তার নজরে আসলে হাতেমের সঙ্গ সে ত্যাগ করেন । হাতেম আলী মূলত এলাকায় লম্পট ও সুদকারবারী হিসেবেই পরিচিত। তার বিরুদ্ধে সুদকারবারী ও একাধিক নারী কেলেংকারি সহ নানা অভিযোগ রয়েছে । কয়েক বছর আগে একই কেলেংকারির মাধ্যমে গ্রামের গন্যমান্য ব্যক্তির উপুস্থিত এক বৈঠকে তার ২য় বিয়ে দেওয়া হয় । বর্তমানে দুজন স্ত্রী পাশাপাশি ঘর করে হাতেমের বাড়িতেই বসবাস করছেন । পারিবারিক কোলহ, মারধর ও লোকচক্ষর ভয়ে এমন অনৈতিক কার্যকালাপ দেখে প্রতিবাদ না করে মুখ বুঝে সব সহ্য করতে হয় তাদের । স্থানীয় এলাকায় অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বছর খানেক আগে হাজীপাড়ার প্রবাসী মনিরুল ইসলাম (আতু) এর বাড়িতে এমন অনৈতিক কার্যকলাপের কারনে বামুন্দি পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ করেন তার প্রতিবেশী । অভিযোগের ভিত্তিতে ফাঁড়ির দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুলের বাড়িতে অভিযান চালান কিন্তু হাতেম বাড়ির পিছন দরজা দিয়ে পালিয়ে যান । পরে বামুন্দি পুলিশ ফাড়ির উপুস্থিতিতে পারিবারিক ভাবে বিষয়টি সুরাহা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাতেম আলী এলাকার যারা প্রবাস যেতে চাই অথবা যাদের ঘরে সুন্দরী মেয়ে বা স্ত্রী রয়েছে তাদেরকে সুদের উপর টাকা দেয় । পরে ওই টকা লেনদেনের মাধ্যমে অপকর্ম চালায় সে । স্থানীয় একজন বলেন, সুদকারবারী হাতেম আলীর কারনে কিছু দিন আগে খামহল গ্রামের হাসেম আলীর স্ত্রী আকলিমা খাতুন আত্মহত্যা করেছে এবং শাকিলা খাতুন নামের আরেক গৃহবধূকে নিয়ে এখনো তার নানা গুঞ্জন রয়েছে । সে কারনে শাকিলার স্বামীর সাথে তার কোলহ সংসারে অশান্তি তৈরি হয়েছে । সুদকারবারী হাতেমের কারনে অনেকে নিঃশ্ব হয়েছেন অনেকের সংসার ভেঙ্গেছে ।
তেঁতুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য ফেরদৌসি বেগম মেহেরপুর বার্তা টোয়েন্টিফোরকে বলেন গত ১০ দিন আগে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও মারধরের হুমকি দেয় হাতেম আলী সহ তার সহযোগিরা । হুমুকি ধুমকি দেওয়ার প্রতিকার পেতে সুদকারবারী হাতেম আলী সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গাংনী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ইউপি সদস্য ফেরদৌসি বেগম । গাংনী থানার ওসি মো: ওবাইদুর রহমান অভিযোগটি এএস আই মোহাম্মদ আলীকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন । বিষয়টি একখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানাগেছে । এসব অপকর্মের বিষয়ে হাতেম আলীর কাছে মুঠুফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন পরে কল ব্যাক করবেন বলে কল কেটেদেন । এলাকাবাসী অবিলম্বে লম্পট হাতেমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন ।
আপনার মতামত লিখুন :