রহস্যজনক মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন


মেহেরপুর নিউজ টোয়েন্টিফোর প্রকাশের সময় : জুলাই ৯, ২০১৮, ৫:০৬ অপরাহ্ণ /
রহস্যজনক মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন
গাংনী প্রতিনিধিঃ  মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়ীয়া গ্রামের আলহাজ্ব আব্দুর রাজ্জাক মাস্টারের পরিবারে গত ১২ বছরে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে রহস্যজনকভাবে । প্রতি ৪/৫ বছরের ব্যাবধানে একটি নির্দিষ্ট মাসের রাতে ঐ পরিবারের ৩ জন সদস্যের রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়। ২০০৩ খ্রি: জুন মাসের ৬ তারিখ রাতে আব্দুর রাজ্জাকের মেজ ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩০)  কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ মারা যায় , সে সময় তিনি তেঁতুলবাড়ীয়া দয়ের পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়েয় প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন। ঠিক ৪ বছর পর ২০০৭ সালের নির্দিষ্ট মাসের একই রাতে আব্দুর রাজ্জাকের ৩ নং ছেলে জাকারিয়া হোসেন (৩০) হঠাৎ মারা যান, তিনিও সহকারী শিক্ষক হিসাবে হিন্দা বালিকা বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন । এবং সবশেষে ২০১২ খ্রি: ৬ জুন দিবাগত রাতে আলহাজ্ব আব্দুর রাজ্জাকের রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় ।
এলাকাবাসীসহ পরিবারের লোকজন বিষ্মিত ছিল যে, কোন কারন ছাড়া পরিবারের সুস্থ মানুষ রাত্রী যাপন করে এবং নির্দিষ্ট মাসের নির্দিষ্ট তারিখে মারাযায় এর রহস্য কী?  অবশেষে ২০১৫ খ্রি: পরিবারের সদস্যরা পরিবারটির ঘরের মেঝে ফ্লোরিং করার সময় ঘরের মাটি খনন কালে তাবিজ,গাছের শিকড়,নৌকার ভাঙ্গা অংশ, লোহা,পুরোনো কাপড়, সুই, চুল, নখ, পরিবারের সদস্যদের নাম ইত্যাদিসহ নানা জাদুটোনা সামগ্রী কাচের বোতল, প্লাস্টিক বোতল ও পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় খুজে পান। আব্দুর রাজ্জাকের ছোট ছেলে আবু জার গিফারী জাহিদ (২৫) বলেন, তার পরিবারের সাথে তার চাচাত ভাই কবিরাজ আব্দুল হাকিমের জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ ছিল । পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুগুলো আমরা স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছিলাম কিন্তু জাদুটোনার উপকরণ সমূহ উদ্ধারের পর আমরা বিষয়টা নিয়ে অনুসন্ধানে নামি । দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার পর ২০১৮ খ্রি: পূর্ণাঙ্গ মৃত্যু রহস্য উন্মোচিত হয় । জাহিদ আরও বলেন, আমাদের অনুসন্ধানে সাক্ষ্যপ্রমাণসহ বেরিয়ে আসে আব্দুল হাকিম কালো জাদুর সাহায্য নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে । আব্দুল হাকিম তার এই ব্লাক ম্যাজিক কিলার মিশনের ষড়যন্ত্রের কথা একাধিক ব্যক্তির কাছে অজ্ঞতাসারে স্বীকার করেছেন । নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার একজন বলেন,”কবিরাজ আব্দুল হাকিমের এই কালো জাদু দ্বারা আব্দুর রাজ্জাকের পুরো পরিবারকে নিঃশেষ করার ষড়যন্ত্রের পুরো ঘটনা আমি জানি এবং যেকেউ এ ঘটনা শুনলে শিউরে উঠবে”। এলাকার কাপড় ব্যাবসারী আব্দুর রশিদ জানান, ” কবিরাজ আব্দুল হাকিম যে এই কাজটি করেছে সে নিজে আমার কাছে স্বীকার করেছে”। জাহিদের ছোট চাচা আজিজুল হক বলেন, “হাকিম যার সামনে এই ষড়যন্ত্রের কথা স্বীকার করেছে সে আমাকে এই বিষয়টা জানিয়েছিলেন” ।
এলাকাবাসীরা জানান, কবিরাজ আব্দুল হাকিমের সাথে চাচা আব্দুর রাজ্জাকের জমিজমা নিয়ে শত্রুতা ছিল। অনেক আগে কবিরাজ আব্দুল হাকিম জমিজমা নিয়ে চাচা আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে আদালতে একটা মামলা করে । আদালত মামলাটি খারিজ করে দিয়ে আব্দুর রাজ্জাকের পক্ষে রায় দেয় । মামলায় জয়ী হতে না পেরে কবিরাজ আব্দুল হাকিম কালো জাদুর আশ্রয় গ্রহন করে আব্দুর রাজ্জাকের পুরো পরিবারটিকে নিঃশেষ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় বলে আব্দুর রাজ্জাকের পরিবারসহ এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে । এদিকে আব্দুর রাজ্জকের ছোট ছেলে জাহিদ বলেন, “কবিরাজ আব্দুল হাকিম যে সমস্ত লোকের কাছে এ ষড়যন্ত্রের স্বীকারোক্তি দিয়েছে তাদের জবানবন্দীর মোবাইল রেকর্ড আমাদের কাছে মওজুদ আছে”। আব্দুর রাজ্জাকের পরিবার বাংলাদেশ সরকারের কাছে ঘটনাটির সুষ্ঠ তদন্ত করে সত্য প্রকাশসহ ন্যায়বিচার দাবি করেছেন ।