ভাষা আন্দোলনের সিনেমা ফাগুন হাওয়ায়’ দেখে অঝোরে কাঁদলেন বৃদ্ধা


Rasheduzzaman প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৯, ৭:০৭ অপরাহ্ণ /
ভাষা আন্দোলনের সিনেমা ফাগুন হাওয়ায়’ দেখে অঝোরে কাঁদলেন বৃদ্ধা

মেহেরপুর বার্তা টোয়েন্টিফোর ডট কমঃ  বৃদ্ধার নাম সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা, থাকেন রাজধানীর এলিফ্যান্ড রোডে। বয়স ৭০ এর কৌঠায় । তিনি ১৯৭৭ সালে কর্মজীবন শুরু করেন ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে শিক্ষকতার মাধ্যমে । এরপর তিতুমীর কলেজ, ইডেন কলেজে শিক্ষকতার পর কর্মজীবন শেষ করেছেন ঢাকা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষকতার মধ্যে। এলপিআরে গেছেন ২০০৬ সালে এবং ২০০৭ সালে  চাকরি থেকে পুরোপুরি অবসরে গেছেন ।

শুক্রবার সকালে বার্ধ্যকের ভারে নুয়ে পড়া এই নারী  বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম চলচ্চিত্র ‘ফাগুন হাওয়ায়’ এর প্রথশ শো দেখতে আসেন। ১০.৪৫ মিনিটের শোতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আসেন সিনেমাটি দেখতে। যা নজর কেড়েছে অনেকের এবং চোখ এড়ায়নি গণমাধ্যম কর্মীদেরও।

‘ফাগুন হাওয়ায়’  চলচ্চিত্রটি দেখতে একা  আসেননি তিনি, সঙ্গে এনেছিলেন তার কন্যাকেও। সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা ঢাকা নিউমার্কেটের বলাকা সিনেমা হলের ডিসিতে বসে শুরু থেকেই পুরো ছবি উপভোগ করেছেন । ছবি দেখার পর কথা বলেন গণমাধ্যমের প্রতিবেদকের সঙ্গে।

সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, ‘চ্যানেল আইতে বিপাশা একটা  অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জেনেছিলাম এই চলচ্চিত্রটি আজ মুক্তি পাবে। সেজন্য আমার মেয়েকে নিয়ে দেখতে এলাম। বিপাশা আমার খুব প্রিয় একজন অভিনেত্রী। তার স্বামী তৌকীর এই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। তাদের ব্যক্তিত্ব, কর্ম আমাকে মুগ্ধ করে। তাদের কথা শুনেই এসেছি।’

ছবি দেখে কেমন লেগেছে জানতে চাইলে সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা কয়েক সেকেন্ড চুপ ছিলেন। এরপর ভেজা চোখে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠস্বরে তিনি বলেন, ‘৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় আমি অনেক ছোট। বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে মিছিল দেখেছি। সেসময়ের ভাষা আন্দোলনের সময় কেমন ছিল একটু একটু মনে আছে। ছবি দেখে পুরো ঘটনা, সেই সময় চোখের সামনে ভেসে ওঠলো। ছবি দেখতে দেখতে অনেকবার আমি আবার শিশুবেলায় ফিরে গিয়েছিল। কত কষ্টের দিন ছিল তখন চোখের সামনে মনে আসছে বারবার। এই ভাষার জন্য কত মানুষ প্রাণ দিয়েছে। সবকিছুই জীবন্ত ধরা দিয়েছে আমার কাছে’। এই কথা গুলো বলার সময় সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা অঝোরে কাঁদছিলেন ।

১৯৫৬ সালের পর ৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানের কথা স্পষ্ট মনে পড়ে সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা। দেশ স্বাধীনের আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। সেসময় তিনি সবকিছু প্রত্যক্ষ করেছেন। এসব কিছু মনে করে ছবি দেখার পর তিনি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। বলেন, ‘আমি কতদিন পর সিনেমা হলে এলাম তা জানিনা। তবে যে কষ্ট করে এসেছি আমার কষ্ট সার্থক হয়েছে। যারা ভাষা আন্দোলন নিয়ে এই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছে তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।’

তার সঙ্গে আলাপ করতে করতে ছবির নায়ক সিয়াম চলে আসেন। কথা বলেন সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরার সঙ্গে। সিয়াম তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বৃদ্ধা সিয়ামের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করেন। পাশেই ছিলেন ছবির নির্মাতা তৌকীর আহমেদ। বৃদ্ধর কথা শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে তখন জনপ্রিয় এই নির্মাতার চোখ ছলছল করছিল।